২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আহা! ডিসি সাহেবরা যদি সারা বছর এরকম আইন মানতেন

-

গতকাল (২ ডিসেম্বর) রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়। এতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের অনেক সম্ভাবনাময়ী ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন ফরম ‘ঠুনকো ও তুচ্ছ’ কারণে বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় ডিসিরা এত তৎপর থাকেন, আইনের যত ফাঁক-ফোকর আছে সবই এসময় তারা বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের স্বাক্ষর মিল না থাকায় মানিকগঞ্জের বিএনপির সব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে দেন সেই জেলার সাহসী ডিসি। তার সাহসের প্রশংসা করতেই হয়। এরকম নিষ্ঠাবান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল(!) জেলা প্রশাসক এ দেশের জন্য আরো বেশি প্রয়োজন।

আর হবিগঞ্জের ডিসি আরো অ্যাডভান্স। তিনি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবীদ ড. রেজা কিবরিয়ার মনোনয়ন বাতিল করেন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ক্রেডিট কার্ডে বকেয়া থাকার কারণে। যদিও রেজা কিবরিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন তিনি অনেক দিন বিদেশে চাকরি করায় এ বিল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। আর ইতোমধ্যে তার সেই বকেয়া পরিশোধ ও করা হয়েছে।

পটুয়াখালীর ডিসি আলোচিত সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনির মনোনয়ন বাতিল করেন হলফনামায় তার স্বাক্ষর না থাকার কারণে। আহা আইনের প্রতি কত শ্রদ্ধাশীল এই মাননীয় ডিসি মহোদয়। গোলাম মাওলা রনি নির্বাচন করছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার আপন ভাগনে শাহজাদা সাজুর বিরুদ্ধে। তাই তুচ্ছ কারণে গোলাম মাওলা রনির মনোনয়ন বাতিল করায় জনমনে এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নির্বাচন কমিশন এই অফিস আদেশ বলে জানিয়েছে যে, ছোট-খাটো ভুলের কারণে যেন প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা না হয়। যে ভুলগুলো তাৎক্ষণিক সংশোধন যোগ্য তা যেন প্রার্থীদের সংশোধন করার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু দেখা গেল তুচ্ছ ও সংশোধনযোগ্য কারণে বিএনপির অনেক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হলো।

শত শত কোটি টাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়েও অনেকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হয়ে বৈধতা পেয়ে গেছেন (ঢাকা-১ আসন)। শুধুমাত্র সরকারি দলের প্রার্থী হওয়ার কারণেই তারা এরকম ছাড় পেয়ে গেছেন বলে অনেকে মনে করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা যখন বিহীত হয়ে যায় তখন সরকারি কর্মকর্তারা কী করেন? হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপ যখন সোনালি, জনতা ও বেসিক ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে যান তখন আইন কোথায় থাকে?

শেয়ার মার্কেটের ঝানু খেলোয়াররাও যখন আইনের মারঁপ্যাচে নির্বাচনে বৈধতা পেয়ে যান তখন আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

মনোনয়ন বাতিল করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পেইজে এই স্টাটাসে বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে ফেরত না দেওয়া মানুষের খবর নেই। মাত্রপাঁচ হাজার টাকা নবায়ন ফি দিতে দেরী করায় রেজা কিবরিয়ার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এছাড়া ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত (পরে অবশ্য আপীল বিভাগ দণ্ড মওকুফ করেছে) বর্তমান সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মায়ার মনোনয়নের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

তার স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল-

‘কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে ফেরত না দেওয়া মানুষের খবর নেই। মনোনয়ন বাতিল হয়েছে পাচ হাজার টাকা নবায়ন ফি দিতে দেরী করা রেজা কিবরিয়ার।

মনোনয়ন বাতিল হয়েছে খালেদা জিয়ার। বাতিল হয়নি মহীউদ্দিন খান আলমগীর আর মায়াদের!
আইনের মারপ্যাচে এমন অনেককিছু করা সম্ভব। সম্ভব নয় মানুষের ভরসা অর্জন করা!’

আমাদের মাননীয় ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা (যারা নির্বাচনের সময় রিটানিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করে থাকেন) যদি সারা বছর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে এত তৎপর থাকতেন তাহলে দেশ কোথায় যেত একটু চিন্তার বিষয়ই বটে।

আবুল হাসান, ঢাকা থেকে (এই লেখার জন্য লেখকই সম্পূর্ণ দায়ী থাকবেন)


আরো সংবাদ



premium cement